লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৪ কোটি ২১ লাখ টাকা বকেয়া থাকার অভিযোগে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকাল সাড়ে ১০ টায় একটি মার্কেট ও গোডাউন রোডস্থ পানির পাম্প’র সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। সাড়ে ৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় ক্ষুদ্ধ ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা। বুধবার বিকালে ঘটনার বিষয়টি প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন পিডিবি’র জেলা কর্মকর্তা। তবে পৌর মেয়র বলছেন, এটি তাঁর সময়কালের নয়। খুব দ্রুত বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হবে।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ ১ হাজার ৩৮ টাকা। এরমধ্যে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বকেয়া ৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। আর সরকারি দফতরগুলোতে ৪৬ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ ও বেসরকারি পর্যায়ে ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫৮ টাকা। বকেয়া বিল আদায়ে পিডিবি একাধিকবার নোটিস করেছেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ গ্রাহকদের। এরমধ্যে পৌরসভাকে সর্বশেষ নোটিস দিয়েছেন গত ২৬ মে।
আরও জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মালিকানাধীন আধুনিক বিপনি বিতান ও গোডাউন রোডস্থ পানির পাম্প’র বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। যারমধ্যে পানির পাম্পের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ছিল ৮৯ লাখ ৭ হাজার ১৮৪ টাকা ও পৌর আধুনিক বিপনি বিতানের বকেয়া ১৮ লাখ ৯০ হাজার ২৯৭ টাকা। এছাড়া পৌর সুপার মার্কেটের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল ৪০ লাখ টাকা। তবে তাৎক্ষণিক মুছলেকা ও বকেয়া ২৭ লাখ টাকা পরিশোধ করায় বিকাল ৫ টায় ওই দুই মিটারের বিদ্যুৎ সংযোগ সচল করে জেলা পিডিবি।
এছাড়া একইদিন লক্ষ্মীপুর পিডিবি পৌরসভা ব্যতিত আরোও ৯ টি গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। জরিমানা আদায় করে ৪৫ লাখ ১৩২ টাকা। আর বুধবার (২৬ জুন) ১১ টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ও বকেয়া বিল আদায় করে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৪৯৭ টাকা।
পৌর ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তানভীর আহমেদ পারভেজ বলেন, পৌরসভায় আমাদের এক টাকাও বকেয়া নেই পানির বিল। জানা মতে অন্য গ্রাহকদেরও পানির বিল বকেয়া রাখার সুযোগ নেই। তারপরেও গোডাউন রোডস্থ পানির পাম্প’র এত টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া। আবার সেই অভিযোগে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়। যা খুবই দুঃখজনক। গতকাল দিনের বেলায় পানি না পাওয়ায় খুবই সমস্যায় পড়তে হয়েছে আমাদের।
ক্ষোভ প্রকাশ করে এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রত্যেক মাসে বিদ্যুৎ বিল ও ভাড়া দিয়ে থাকি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পিডিবিকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেনি। এটি ব্যবসায়ীদের দোষ নয়। তারপরেও গতকাল আমরা শাস্তি পেয়েছি। প্রায় সাড়ে ৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ বিহীন ছিল আমাদের মার্কেট। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর দায় মেয়র ও পৌর কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। আমাদের দাবী দ্রুত বকেয়া বিলগুলো পরিশোধ করা হোক। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যার সম্মুখিন হতে না হয়।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূইয়া বলেন, ৪ কোটি ২১ লাখ টাকার সবগুলো বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আমার দায়িত্বকালীন সময়ের নয়। বেশিরভাগ বকেয়া পূর্বের মেয়র রেখে গিয়েছেন। তবে আমি চেষ্টা করছি দ্রুত বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার। আর সাময়িক সমস্যার জন্য ব্যবসায়ী ও পৌর বাসিন্দাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড লক্ষ্মীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল আমিন বলেন, পৌরসভাকে একাধিকবার নোটিশ করা হলেও তারা বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেনি। এজন্য তাদের মালিকানাধীন দুইটি প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরবর্তীতে কিছু টাকা পরিশোধ, মুছলেকা ও আগামী এক মাসে বকেয়া সকল টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করে দেয়। তবে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।