অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত লক্ষ্মীপুরের রায়পুর শহরের আলীয়া কামিল মাদরসার মাঠে মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প। প্রায় ৫ বছর আগে এলজিইডির তত্ববধানে ৩৪ লাখ টাকা ব্যায়ে জাদুঘরটি করেছিলেন ঠিকাদার (বর্তমান বিআরডিবির চেয়ারম্যান)। ফলে এটি এখন মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দরজা-জানালা সব খুলে নিয়ে গেছে মাদকসেবীরা।
সারাদিন বখাটেরা আড্ডায় এবং শিশু-কিশোররা খেলাধুলায় মেতে থাকে। এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের দাবী স্থানটিকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে সঠিক রক্ষনা-বেক্ষন করার দাবি জানান।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রায়পুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এমপির নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের উপস্থিতিতে মাসিক আইনশৃংখলা সভায় কমিটি সদস্য পৌর মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজি জামশেদ কবির বাকি বিল্লাহ স্বৃতি জাদুঘর সংরক্ষনের দাবি জানান।
আওয়ামীলীগ নেতা বাকি বিল্লাহ জানান, বিশ্বের প্রতিটি জাতি তাদের বীরত্বের নজির রেখেছেন। সংরক্ষণ করেছেন তাদের ইতিহাসের স্মৃতি। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়,আমরা যাদের কারণে এই মহান বিজয় পেলাম তাদের স্মৃতি নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। স্থানীয় কিছু কুচক্রী মহল এই জাদুঘরটিকে আজও পরিপূর্ণ জাদুঘরে রুপান্তর করতে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে জাদুঘরটি। বর্তমানের এটি মাদক সেবীদের নিরাপদ আস্তানা হয়ে উঠেছে। দুপুরের পর থেকে জাদুঘরসহ মাদরাসা মাঠে, ভবনে ও মসজিদ পুকুর ঘাটেও চলে মাদকের আড্ডা।।
জাদুঘরের দরজা-জানালা খুলে নিয়ে গেছে। টয়লেট ভেঙ্গে দিয়েছে। সারাদিন বখাটেরা আড্ডা ও শিশু-কিশোরদের খেলা চলছে। তার চারপাশে আলীয়া কামিল মাদরাসা ভবন, স্টেশান মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যদয়, শিক্ষকদের প্রশিক্ষন ভবন, যা প্রতিদিনই শিক্ষকরা প্রশিক্ষন নিচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, আলীয়া কামিল মাদরাসার মাঠে ১৯৭১ সালে রায়পুরের মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাটি ছিল। স্থানটিতে মুক্তিযোদ্ধারা সহজে খবরা-খবর দেয়া-নেয়া করতে পারতো। স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধারা এই স্থানটিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর ঘোষণা করেছিলেন। এমতাবস্থায় ২০২০ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এলজিইডি তত্বাবধানে ৩৪ লাখ টাকা ব্যায়ে ঠিকাদার বর্তমান বিআরডিবির চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান খান জাদুঘরটি নির্মাণ করেছিলেন। সেটি ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যাক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে। হারিয়ে যেতে বসেছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত ক্যাম্প।।
দুপুর তিনটায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন কক্ষে পড়ে আছে ইয়াবা সেবনে কাজে ব্যবহৃত পোড়া ফয়েল পেপার, বিয়ারের ক্যান, সিগারেটের খোসা। একদিকে শিশুরা খেলছে জুদুঘরের ভিতরে এবং মাঠে কিশোররা অন্যদিকে মাদরাসার শিক্ষকদের সভা হচ্ছে ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষন হচ্ছে। যা দেখে সহজেই অনুমান করা যায় জাদুঘরটি এখন মাদক সেবীদের নিরাপদ আখড়ায় পরিণত ও শিশু -কিশোরদের খেলার মাঠ ।
রায়পুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন এই মাদরাসা মাঠটি স্মৃতি বিজরিত স্থান। মুক্তিযোদ্ধারা এখান থেজে যুদ্ধ শুরু ও নির্দেশনা করতেন। তিনি এই জাদুঘরটি দ্রুত সংস্কারে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
চরবংশী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসীন রেজা বলেন, ১৯৭১ সালে এই আলীয়া মাদরাসা মাঠে অবস্থান করেন উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা। এখান থেকে সুসংগঠিত হয়ে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পরিকল্পনা ও পরিচালনা করতেন। গত তিন বছর যাবত অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে এই স্থান টি। দরজা-জানালা-টয়লেট কিছুই নেই। স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানটি সংস্কারের দাবি জানান।
মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট বলেন, যুদ্ধকালীন ক্যাম্পটি এখন মাদক সেবীদের নিরাপদ আখড়ায় পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের একটি লালিত স্বপ্ন। সরকারিভাবে এটি দ্রুত সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত। সংষ্কার করলে এটি গড়ে উঠতে পাড়ে একটি দর্শনীয় মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর হিসেবে। যা আগামী প্রজন্মকে দেশের প্রতি ভালবাসা ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হতে সাহায্য করবে।